জয়পুরহাট প্রতিনিধি:
জয়পুরহাটে কালাই উপজেলার মাত্রাই ইউনিয়নের বিয়ালা গ্রামের আসলাম হোসেন দিনে দিনে পাল্টে যাচ্ছে জীবনমান।যিনি একসময় ‘খোর আসলাম’ নামে পরিচিত ছিলেন এলাকায়। আজ তিনি সফল এক হাঁস খামারি ও কর্মসংস্থান সৃষ্টিকারী উদ্যোক্তা।
এবং আত্মবিশ্বাস,অদম্য ইচ্ছাশক্তি ও কঠোর পরিশ্রমে নিজের ভাগ্য বদলে অনুকরণীয় দৃষ্টান্ত স্থাপন করেছেন।এতে নিজের স্বপ্ন যেমন পূরণ হচ্ছে ঠিক তেমনি কিছু এলাকার নারী ও পুরুষদের
কর্মস্থল তৈরি হচ্ছে।তিনি এখন পরিবার ও সমাজে আর্থিক অবদান রাখছেন।
এবং মাংস ও আমিষের ঘারতি পূরণ হচ্ছে। অন্যদিকে হাঁসের লিটার ফসলী জমিতে জৈব সার হিসেবে ব্যবহার করে ফসল ফলাচ্ছেন কৃষকরা।হাঁসের লিটার জমিতে ব্যবহার করার কারণে জমির উর্বলতা বৃদ্ধি পাচ্ছে এবং জৈব সারের চাহিদা মিটাচ্ছে ফলে বিভিন্ন সবজি উৎপাদন ফসল বৃদ্ধি হচ্ছে। ।
এলাকাবাসী সুত্রে জানা গেছে, ৩৮ বছর বয়সী আসলামের জীবন ছিল ধূমপাননির্ভর ও দারিদ্র্যকবলিত। দিনে ১০০ থেকে ১৫০ টাকা পর্যন্ত সিগারেট খরচ হতো তার। সংসার চলতো দিনমজুরির টাকায়, দু’বেলা ঠিকমতো খাবার জুটতো না। সামাজিকভাবে অপমানিত ও অবহেলিত হতেন প্রতিনিয়ত। তবে, সবকিছুর মোড় ঘুরে যায় এক শুক্রবারে। জুমার নামাজে অংশ নিতে গিয়ে তার শরীর থেকে ধূমপানের দুর্গন্ধে মসজিদের মুসল্লিরা দূরে সরে দাঁড়ালে আত্মসম্মানে চরম আঘাত পান তিনি। তখন তিনি প্রতিজ্ঞা করেন ধূমপান ছেড়ে দেয়ার। একমাস সিগারেট না খেয়ে জমানো প্রায় ৪ হাজার টাকা দিয়েই শুরু করে হাঁস পালনের ক্ষুদ্র উদ্যোগ। প্রথমে ৪০টি হাঁস দিয়ে শুরু হওয়া খামার আজ ১৮শ’ হাঁসের বিশাল একটা খামার পরিণত হয়েছে।
উদ্যোক্তা আসলাম বলেন, বছরে গড়ে ২ থেকে আড়াই লাখ টাকা পর্যন্ত আয় হয় শুধু ডিম বিক্রি করে। হাঁসের পাশাপাশি তিনি একটি বাচ্চা উৎপাদনের ইউনিটও চালু করেছেন। এখন তার খামারে কর্মরত প্রায় ৫ -৬ জন নারী ও পুরুষ শ্রমিক নিয়মিত কাজ করছেন। শুধু নিজের পরিবারের ভাগ্য নয়, বদলে দিয়েছেন অন্য অনেকের জীবনের গল্পও। আসলামের স্ত্রী ও দুই সন্তান এখন সুন্দরভাবে জীবনযাপন করছেন।
তিনি আরও বলেন, আগে সিগারেট কিনেই টাকাগুলো উড়িয়ে দিতাম, এখন সেই টাকা দিয়েই সংসার চলে। আমি চাই, যাদের মনে সাহস আছে, তারা যেন নিজের ভাগ্য পরিবর্তনের চেষ্টা করেন।
খামারে কর্মরত মহিলা শ্রমিক শাহিদা বেগম বলেন, আগে আমাদের ঘরে অভাব লেগেই থাকতো। মহিলা হয়ে বাইরে কাজ করাও কঠিন ছিল। কিন্তু আসলাম ভাইয়ের খামারে কাজ পেয়ে এখন নিজের উপার্জন টাকা দিয়ে ছেলেমেয়ের পড়াশোনার খরচ চালাতে পারছি। উনি শুধু নিজের জীবন বদলাননি, আমাদের মতো অনেকের জীবনও বদলে দিয়েছেন।
এই বিষয়ে কালাই উপজেলা কৃষি কর্মকর্তা কৃষিবিদ অরুণ চন্দ্র রায় বলেন, হাঁসের লিটার ফসলী জমিতে ব্যবহার করিলে ফসলের জৈব সারের চাহিদা পূরণ হয়, জৈব সারের চাহিদা পূরণ হয়ার কারণে যেকোনো ধরনের সবজি উৎপাদন ভালো হয়। এজন্য কৃষকরা হাঁসের লিটার জমিতে ব্যবহার করে থাকে এবং অল্প টাকায় হাঁসের লিটার কৃষকরা সংগ্রহ করতে পারে
উপজেলা প্রাণিসম্পদ কর্মকর্তা ডা. মো. মনিরুজ্জামান আসলামের এই সফলতা সম্পর্কে বলেন, আমরা শুধু আসলাম নয়, এ রকম আরও সম্ভাবনাময় উদ্যোক্তাদের খুঁজে বের করে প্রশিক্ষণ, ভ্যাকসিন, পরামর্শ ও প্রযুক্তিগত সহায়তা দিয়ে থাকি। হাঁস পালন অত্যন্ত লাভজনক খাত এবং সরকার ও প্রাণিসম্পদ অধিদপ্তর নতুন উদ্যোক্তা তৈরিতে নিরবচ্ছিন্নভাবে কাজ করছে। আসলামের মতো উদ্যোক্তাদের আমরা সার্বিক সহযোগিতা দিয়ে যাবো।