মোঃ মোকাররম হোসাইন জয়পুরহাট প্রতিনিধি:
জয়পুরহাটে কালাই উপজেলায় বরাবরের মত এবারও কোরবানির পশুর চামড়ার বাজারে ধস নেমেছে। লাভের আশায় গ্রামগঞ্জ থেকে চামড়া কিনেই বিপাকে পরেছে মৌসুমী ব্যবসায়ীরা। প্রত্যন্ত এলাকায় গিয়ে ৪০০ থেকে ৬০০ টাকা দরে গরুর চামড়া কিনে এনে লাভতো দুরের কথা আসল টাকাও তুলতে পারছেন না মৌসুমী ব্যবসায়ীরা। এতে করে বড় ধরনের আর্থিক ক্ষতির মুখে পড়েছেন তারা। অনেক জায়গায় চামড়ার দাম কম হওয়ায় অবহেলায় মাটিতেও পুঁতে ফেলে চামড়া।
তবে, মৌসুমী ব্যবসায়ীদের অভিযোগ, সরকারি নীতিমালার তোয়াক্কা না করে আগে থেকেই সাজানো সিন্ডিকেটের ফাঁদে ফেলে নিজেদের ইচ্ছেমতো চামড়া কিনছেন আড়ৎদাররা।
গত ২৬ মে বাণিজ্য মন্ত্রণালয় কোরবানির পশুর চামড়ার দাম নির্ধারণ করে দেয়। ঢাকার বাইরে গরুর চামড়া প্রতি বর্গফুট লবণযুক্ত দাম নির্ধারণ করা হয় ৫৫-৬০ টাকা, যা গত বছর ছিল ৫০-৫৫ টাকা। এতে করে প্রতি গরুর চামড়ার সর্বনি¤œ দাম নির্ধারণ করা হয়েছে ১ হাজার ১৫০ টাকা। আর খাসির চামড়া প্রতি বর্গফুট ২২-২৭ টাকা ও বকরির চামড়া ২০-২২ টাকা নির্ধারণ করা হয়। তার কোনো বাস্তবায়ন এ উপজেলায় লক্ষ্য করা যায়নি বা কেউ মানেননি।
চামড়া বিক্রেতাদের কথা বলে জানা গেছে, বাজারে প্রতিটি গরুর চামড়া বিক্রি হয়েছে গড়ে ৩০০ থেকে ৫০০ টাকায়। ছাগলের চামড়া ১০ থেকে ২০ টাকায়। অনেকেই বিক্রি করতে না পেরে মাটিতে পুঁতেও ফেলেছে।
এ উপজেলার আনোয়ারুল হক মামুন, জাকির হোসেন, ফাতেউল চৌধরী, মোখলেচুর রহমান, পাঁচশিরা বাজারের রাশিদুল আলমসহ উপজেলার বিভিন্ন এলাকার কোরবানিদাতারা জানান, গত বছরের মতোই এবারও চামড়ার দাম নেই। অনেকেই বিক্রি করতে না পেরে মাটিতে পুঁতে ফেলেছে।
কালাই উপজেলার শ্রী কাজলসহ অনেক মৌসুমী ব্যবসায়ীরা জানান, কোরবানির চামড়ার আকস্মিক দরপতনে দিশেহারা তারা। নাম প্রকাশ না করা শর্তে অনেক ফড়িয়া জানান, সীমান্তে কড়াকড়ি না থাকলে তারা ওপারে চামড়া পাঠিয়ে কিছু লাভের মুখ দেখতেন। বিজিবির কারনে এবার সেটিও করা যাচ্ছে না। পুঁজি সংকট, ট্যানারি মালিকদের কাছে বকেয়া পাওনাসহ নানা কারণে চামড়ার দামে ধ্বস নেমেছে।
জয়পুরহাট শহরের চামড়া ব্যবসায়ী গোলজার হোসেন ও সুমন আলী জানান, ট্যানারি মালিকদের কাছে বকেয়া পাওনা রয়েছে কোটি কোটি টাকা। হাতে টাকা না থাকায় তারা চামড়া কিনতে পারছেন না। ফলে বাজারে চাহিদা কম থাকায় চামড়ার মূল্য স্বাভাবিক কারণে কমে গেছে। অন্যদিকে, চামড়া পাঁচার রোধে ঈদের আগে থেকেই সীমান্তে বিজিবির টহল বাড়ানো হয়েছে। ফলে স্থানীয় বাজারে আপাতত চামড়া কেনাবেচা করতে হচ্ছে। যদি পাঁচারের সুযোগ থাকতো, তাহলে হুহু করে চামড়ার দাম বেড়ে যেত। তখন চামড়া নিয়ে এত পরাভোগ ভূগতে হতনা।
পাঁচশিরা বাজারে চামড়া বিক্রি করতে আশা কালাই উপজেলার সড়াইল গ্রামের রেজাউল করিম বলেন, গতবছরের মতো এবারও পানির দরে চামড়া বিক্রি করতে হলো। সরকার যে দাম নির্ধারণ করেছে তার সাথে কোনো সম্পর্ক নেই। ব্যবসায়ীরা তাদের মনগড়া ভাবে চামড়া ক্রয় করছেন।
এ উপজেলার হাতিয়র গ্রামের মোস্তাফিজুর রহমান বলেন, ১ লাখ ১২ হাজার টাকার গরুর চামড়া বিক্রি করেছি মাত্র সাড়ে ৪০০ টাকায়। আর ২২ হাজার টাকার খাসির চামড়া কেউ নেয়নি। বাধ্য হয়ে মাটিতে পুঁতে রেখেছি।
জয়পুরহাট ২০ বিজিবি ব্যাটালিয়নের অধিনায়ক লে. কর্নেল আরিফুর দৌলা জানান, তাদের অধীনে সীমান্ত এলাকা রয়েছে ৪১ কিলোমিটার। ২২ কিলোমিটার এলাকা কাঁটাতারে ঘেরা। চোরাকারবারিরা মূলত কাঁটাতারের বাহিরের জায়গা পাচারের পথ হিসেবে ব্যবহার করে। ফলে এই জায়গাগুলো সব সময় নজরদারির মধ্যে রাখা হয়েছে। চামড়া পাচার রোধে সব ধরনের ব্যবস্থা নিয়েছেন তারা।