মোঃ মোকাররম হোসাইন জয়পুরহাট প্রতিনিধি:
প্রচন্ড খরা, দীর্ঘদিন ধরে নেই বৃষ্টির দেখা। শনিবার সকাল সাড়ে ১০টার দিকে হঠাৎ করেই নেমে আসে বৃষ্টির পানি। মাত্র ১০ মিনিটের বৃষ্টির পানি জমে সৃষ্টি হয় জলাবদ্ধতা। এমন দৃশ্য জয়পুরহাটের কালাই পৌরশহরে প্রাণকেন্দ্র বাসস্ট্যান্ড এলাকায় কালাই-ক্ষেতলাল সড়কে দেখা যায়। পানি নিস্কাশনের ব্যবস্থা না থাকায় বৃষ্টির পরও ওই এলাকায় জমে আছে পানি। ফলে প্রথম শ্রেণীর কালাই পৌরসভা থেকে নাগরিকদের কপালে সেবার পরিবর্তে জুটেছে দূর্ভোগ। আর ভোগান্তিতে পড়েছে বিভিন্ন যানবাহনের চালক, শিক্ষার্থীসহ পথচারী। তাঁদের ভাষ্য, রাস্তার দুই পাশে অপরিকল্পিতভাবে বসতবাড়ি ও ব্যবসা প্রতিষ্ঠানের স্থাপনা নির্মাণ, সেই সাথে পানি নিস্কাশনের ড্রেনেজ ব্যবস্থা না থাকায় সামান্য বৃষ্টির পানিতেই তলিয়ে যায় সড়ক। শুধু তাই নয়, জমে থাকা পানি নামতেও দীর্ঘ সময় লেগে যায়।
জানা যায়, প্রথম শ্রেণীর কালাই পৌরসভা। প্রতিদিন হাজার হাজার মানুষের সমাগম হয় শহরে। এছাড়া জয়পুরহাট-বগুড়া মহাসড়ক ও কালাই-ক্ষেতলাল সংযোগ সড়কও রয়েছে। এই সড়ক হয়ে কালাই উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্স, কালাই সরকারি মহিলা কলেজ, কালাই সরকারি ময়েন উদ্দিন উচ্চ বিদ্যালয়, মডেল সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়, কাকলি শিশু নিকেতন ও বৃহত কালাই হাট রয়েছে। এসব প্রতিষ্ঠান থাকায় প্রতিদিন উপজেলার কয়েক হাজার মানুষ চলাচল করে এই সড়কে। চলতি এসএসসি পরীক্ষা শেষ হলেও শুরু হয়েছে তাদের প্যাকটিক্যাল পরীক্ষা। শনিবার সকালে এই সড়কে ঘন্টার পর ঘন্টা ধরে বৃষ্টির পানি জমে থাকায় চরম ভোগান্তিতে পরে বিশেষ করে শিক্ষার্থীরা। পৌরশহরের প্রাণকেন্দ্র কালাই বাসস্ট্যান্ড চত্বরে পাকা রাস্তার দুই পাশে ভবনগুলো অপরিকল্পিতভাবে নির্মাণ করা এবং পানি নিস্কাশনের ড্রেনেজ ব্যবস্থা না থাকায় সামান্য বৃষ্টির পানিতে তলিয়ে যায়। ফলে অল্প পানিতেই জমে হয় একহাটু। দীর্ঘদিন ধরে এমন দুর্ভোগ পোহাচ্ছেন পৌরবাসী, বিভিন্ন শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানের শিক্ষার্থী, যানবাহনের চালক ও পথচারীরা।
কালাই সরকারি ময়েন উদ্দিন উচ্চ বিদ্যালয়ের প্রধান শিক্ষক (বারপ্রাপ্ত) সাইফুল ইসলাম বকুল বলেন, একটি শহরে যা কিছু থাকা প্রয়োজন, বলতে গেলে তার সবই এই সড়কে অবস্থিত। শহরে যারা আসবেন, তাদের অধিকাংশই কোনো না কোনো কাজে এই সড়কে চলাচল করতে হয়। সড়কে পানি জমে থাকার সমস্যা আজকের নয়, এটি দীর্ঘদিনের। অনেকবার বলেছি, কোনো লাভ হয়নি। তিনি আরও বলেন, আজ থেকে শুরু হয়েছে এসএসসি পরীক্ষার্থীদের প্যাকটিক্যাল পরীক্ষা। সড়কে বৃষ্টির পানি জমে থাকার কারনে অনেক শিক্ষার্থীর কাপড় ও জুতা ভিজে গেছে। এ সমস্যা সমাধানের আবারও অনুরোধ জানিয়েছেন তিনি।
কথা হয় কয়েকজন পথচারীর সাথে। তাঁরা বলেন, এই সড়ক হয়ে সবাইকেই চলাচল করতে হয়। কেননা হাসপাতাল, স্কুল-কলেজ ও হাট রয়েছে। তাছাড়া এক উপজেলা থেকে অন্য উপজেলা হয়ে আশপাশের জেলাগুলোতেও যাতায়াত করে যানবাহনগুলো। অথচ এই সমস্যা দীর্ঘদিন ধরেই রয়েছে। সামান্য বৃষ্টি হলেই সড়ক পানিতে তলিয়ে যায়। সমস্যার সমাধান না হওয়ায় ক্ষোভ প্রকাশ করেন তাঁরা।
ওই সড়কের পাশে ইউনিক লাইব্রেরীর মালিক প্রভাষক ছানাউল হক বলেন,‘দিনদিন এ এলাকার পরিবেশ অনুপযোগী হয়ে যাচ্ছে। সামান্য বৃষ্টিতেই পাকা সড়কে জমে পানি। যত্রতত্র ময়লা-আবর্জনাও জমে থাকে। আসলে বলে কোনো লাভ হয়না।’
আরেক ব্যবসায়ী বাবু বলেন,‘এ সড়ক নির্মাণ হয়েছে অনেক আগে, দুই পাশে ভবন নির্মাণ হয়েছে অনেক পড়ে। নকশা ছাড়া অপরিকল্পিতভাবে ভবন নির্মাণ করার কারনে এ সমস্যার সৃষ্টি হয়েছে। তাই এ ভোগান্তির শিকার হতে হচ্ছে সকলকে।’
শনিবার সকাল সাড়ে ১০ টার দিকে মাত্র ১০ মিনিটের বর্ষণে এ সড়কে জলাবদ্ধতার সৃষ্টি হয়। শুধু এখানেই নয়, উপজেলা পরিষদের ভিতরে সাব-রেজিস্ট্রার অফিস চত্বরেও একই দৃশ্য দেখা যায়। অফিস বন্ধের কারনে ওই চত্বরে লোকজন তেমন না দেখা গেলেও উপঁচে পড়া ভীর দেখা গেছে সড়কে। এতে করে শিক্ষার্থী ও রোগী ও যানবাহনের চালকরা সীমাহীন দুর্ভোগে পড়েছেন। অপরিকল্পিত ভবন নির্মাণ, সেই সাথে পানি নিস্কাশনের ড্রেনেজ ব্যবস্থা না থাকায় শহরের ময়লা-আবর্জনার সঙ্গে মিশে সড়কে বৃষ্টির পানি আরও অস্বাস্থ্যকর হয়ে পড়ে। এই অস্বাস্থ্যকর পানির ওপর দিয়ে মানুষকে রাস্তা পার হতে দেখা গেছে। যানবাহনগুলোও ধীর গতিতে পারাপার হতে দেখা গেছে।
কালাই পৌরসভার নির্বাহী প্রকৌশলী একেএম সাইফুল ইসলাম বলেন,‘ এ সমস্যা একদিনের নয়, চাইলেই সমাধান করা যাবে না। বেশ কয়েকবার কাজ করতে গিয়ে ফুটপাতে বসা ব্যবসায়ীদের বাঁধার মুখে পড়ে ফিরে আসতে হয়েছে। তারপর আগামী বর্ষা মৌসুমের আগেই এই সমস্যা সমাধান করতে হবে। তা না পারলে পৌরবাসীকে আরও দূর্ভোগ পোহাতে হবে।