জুলাইে আন্দোলনে রাজধানীর মিরপুর মডেল থানার হত্যা মামলায় সাবেক সংসদ সদস্য মমতাজ বেগমের চার দিনের রিমান্ড মঞ্জুর করেছেন আদালত।
এদিকে, এজলাসে তোলার সময় বিক্ষুব্ধ কিছু আইনজীবী ‘ফাইট্টা যায়’ স্লোগান দিয়ে মমতাজের দিকে তেড়ে যাওয়ার চেষ্টা করেন। এসময় পুলিশ সদস্যরা তাদের বাধা দেন।
মঙ্গলবার (১৩ মে) ঢাকার চিফ মেট্রোপলিটন ম্যাজিস্ট্রেট আদালতে তাকে হাজির করে পুলিশ। এরপর মামলার তদন্ত কর্মকর্তা মিরপুর মডেল থানার এসআই মনিরুল ইসলাম তাকে জিজ্ঞাসাবাদের জন্য সাত দিনের রিমান্ডের আবেদন করেন।
অপরদিকে আসামি পক্ষের আইনজীবীরা রিমান্ডের আবেদন বাতিল পূর্বক জামিনের আবেদন করেন। এছাড়া রাষ্ট্রপক্ষে মহানগর পিপি ওমর ফারুক ফারুকী রিমান্ড মঞ্জুর পক্ষে শুনানি করেন।
শুনানিতে তিনি বলেন, যখন মমতাজ গান গাইতেন তখন তাকে সব দলমতের মানুষ পছন্দ করত। কিন্তু মানুষের সেই ভালোবাসাকে কাজে লাগিয়ে গানকে ব্যবহার করে মমতাজ বেগম স্বৈরাচার শেখ হাসিনাকে সহায়তা করেছেন। সিংগাইর এলাকার মানুষজন খুবই সহজ সরল। তাদের ভোটাধিকার কেড়ে নেয় মমতাজ বেগম। আমাদের পার্লামেন্টে এক মিনিটে খরচ হয় কয়েক কোটি টাকা। কিন্তু তিনি সেই পার্লামেন্টে শেখ হাসিনাকে নিয়ে গান গাইতেন।
তিনি গানে বলেন, শেখ হাসিনার মতো নেত্রী বিশ্বে নাই। এসময় সবাই শেম শেম বলতে থাকেন। তিনি আরও বলেন, মমতাজ নাকি আরও বলেন, খালেদা জিয়ার বাবার নাম নাকি তিনি জানেন না। এটা কেমন কথা। দেশের স্বাধীনতার ঘোষক জিয়াউর রহমানকে নিয়েও তুচ্ছ তাচ্ছিল্য করেন এই মমতাজ।
ফ্যাসিস্ট হাসিনাকে মমতাজদের মতো শিল্পীরা কেউ গান গেয়ে, কেউ ক্রিকেট খেলে, কেউ কবিতা লিখে, কেউ অভিনয় করে উজ্জীবিত করেছে। শেখ হাসিনার যখন মন খারাপ থাকতো, অবসর সময় কাটাতো তখন মমতাজ তাকে গান শুনাতো। হাসিনা ফ্যাসিজমকে দেশে প্রতিষ্ঠিত করার জন্য মমতাজদের মতো শিল্পীদের ব্যবহার করেছে। বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলনে মমতাজরা শেখ হাসিনাকে উজ্জীবিত করেছে, অর্থ সহায়তা দিয়েছে।
উভয় পক্ষের শুনানি শেষে মেট্রোপলিটন ম্যাজিস্ট্রেট মো. জুয়েল রানা জামিনের আবেদন নাকচ করে রিমান্ডের এ আদেশ দেন। রিমান্ড মঞ্জুর শেষে বেলা সাড়ে ৩টার দিকে সিএমএম আদালতের সাততলা থেকে মমতাজকে লিফটে করে হাজতখানায় নিতে যান পুলিশ সদস্যরা। এসময় বিএনপিপন্থি আইনজীবীরা বাধা দেন। তারা দাবি করেন মমতাজকে হাঁটিয়ে হাজতখানায় নিতে হবে। পরে এ নিয়ে হট্টগোল সৃষ্টি হলে অতিরিক্ত পুলিশ এসে মমতাজকে লিফটে করে নিচে নামিয়ে হাজতখানায় প্রবেশ করান।
এর আগে দুপুর ২টা ১৭ মিনিটে তাকে ঢাকার সিএমএম আদালতে হাজির করে পুলিশ। এরপর তাকে সিএমএম আদালতের হাজতখানায় রাখা হয়েছে। এরপর বিকেল ৩টার দিকে মমতাজ বেগমকে আদালতে তোলা হয়। এসময় তার মাথায় হেলমেট ও বুকে বুলেটপ্রুফ জ্যাকেট পরানো ছিল। কড়া পুলিশি নিরাপত্তায় তাকে হাঁটিয়ে আদালতে নেওয়া হয়। তখন সাংবাদিকদের ক্যামেরা দেখে মাথা নিচু করে মুখ লুকানোর চেষ্টা করেন মমতাজ। এর আগে মঙ্গলবার রাত পৌনে ১২টায় রাজধানীর ধানমন্ডি থেকে তাকে গ্রেফতার করা হয়।
জানা যায়, গত ১৯ জুলাই মিরপুর-১০ নং গোলচত্বর এলাকায় বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলনে অংশ নেন মো. সাগর। ওইদিন বিকেল সাড়ে ৪টার দিকে আসামিরা আন্দোলনকারীদের ওপর হামলা ও গুলিবর্ষণ করেন। এসময় ভুক্তভোগী সাগরের বুকে গুলি লেগে পেছন দিকে বের হয়ে যায়। তার মা মোসা. বিউটি আক্তার তাকে খুঁজতে থাকেন।
এক পর্যায়ে ওইদিন দিবাগত রাত ৩টায় মিরপুরের একটি বেসরকারি হাসপাতালে তার লাশের সন্ধান পান তিনি। পরে সন্তানের লাশ গ্রহণ করে গ্রামের বাড়িতে দাফন সম্পন্ন করেন। এ ঘটনায় গত ২৭ নভেম্বর নিহতের মা মোসা. বিউটি আক্তার বাদী হয়ে মিরপুর মডেল থানায় মামলা করেন। এতে শেখ হাসিনাসহ ২৪৩ জনের নাম উল্লেখ করা হয়। এছাড়া মামলায় ২৫০-৪০০ জনকে অজ্ঞাতপরিচয় আসামি করা হয়।